রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
spot_imgspot_img
Homeভাষা ও সংস্কৃতিভাটকবি হিরা মিঞা

ভাটকবি হিরা মিঞা

প্রিয় পাঠক, প্রত্নগবেষক ও লোকসাহিত্যিক মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠানের ভাটকবিদের নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার ফল তাঁর গ্রন্থ ‘বাংলাদেশের ভাটকবি ও কবিতা’। এ-গ্রন্থ থেকে নরসিংদীর ভাটকবি হিরা মিঞাকে নিয়ে এই লেখাটি প্রকাশ করা হলো। এই গ্রন্থের বিপুল পাঠ ও পরিচিতির স্বার্থে ও নরসিংদীর ঐতিহ্যপূর্ণ এক আখ্যানের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্যে আমাদের এ-উদ্যোগ।

পল্লীকবি হিরা মিঞা নরসিংদী জেলার (সাবেক ঢাকা) নোয়াদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম দুখাই বেপারী। তাঁর সমকালে আরেক খ্যাতিমান ভাটকবি মফিজ উদ্দিন একই গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত সময়ে এই দুই কবির কবিতায় এ-অঞ্চলের হাট-বাজার, মেলা, রেলস্টেশন প্রভৃতি জনাকীর্ণ স্থানগুলো প্লাবিত হয়ে গিয়েছিলো। দুজন কবি প্রায় প্রতিযোগিতার মতো প্রতি সপ্তাহেই নতুন কবিতার বই নিয়ে শ্রোতা-ক্রেতাদের সম্মুখে উপস্থিত হতেন। মুখে টিনের চোঙা ধরে সুর করে পড়ে কবিতা বিক্রয় করতেন। তখন তাঁদের উপস্থিতিতে বাজারে-বন্দরে আগত উৎসুক শ্রোতাদের ভিড় লেগে যেতো। সেই অতি পরিচিত দৃশ্যটি অধুনা আর দেখা যায় না। এখন ভাটকবিও নেই এবং অত্যন্ত আবেগঘন সুরেলা কণ্ঠে পঠিত কবিতা শুনতে আগ্রহী শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের চমৎকার বিষয়টিও চিরকালের জন্যে অন্তর্হিত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে হিরা মিঞা ইন্তেকাল করেন।

পূর্বেই বলা হয়েছে, স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ব পর্যন্ত উভয় কবির প্রচুর কবিতা প্রকাশিত হয়েছিলো। কবি মফিজ উদ্দিন সমাজ ও রাজনীতি, প্রেমপ্রীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নানা ঘটনা-দুর্ঘটনা, বৈজ্ঞানিক অভিযান প্রভৃতি বিচিত্র বিষয়ে কবিতা লিখেছেন। সেক্ষেত্রে হিরা মিঞা প্রধানত প্রেমঘটিত কবিতা রচনায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। তাঁর কবিতার ভাষা-বিন্যাস অকপট সারল্যে ভূষিত, গতিশীল এবং প্রাণবন্ত। তিনি যে-পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠেছেন, সেখানকার প্রকৃতি-পরিবেশ, মানুষজন, তাদের প্রেম-ভালোবাসা এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতকে উপজীব্য করেই তাঁর কাব্যজগত আবর্তিত হয়েছে। নায়িকার অঙ্গসৌষ্ঠব ও সাজসজ্জা বর্ণনায় কবি বাংলার প্রকৃতি, নিসর্গ ও লোকজীবনের অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্যগুলো উপমা, রূপক এবং উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অর্থালঙ্কার প্রয়োগে যথেষ্ট কাব্যকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। জানা যায়, হিরা মিঞার ২০-২৫ টি কবিতা-পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিলো। তন্মধ্যে নিম্নে উল্লেখিত পুস্তিকাগুলো আমাদের দেখার সুযোগ হয়েছে।

  • ছায়ানট ও আলমাছ মিঞার বিশ্বপ্রেমের জোড়া, এক প্রেমে দুইজন মরা (কবিতা ও গান)। মুদ্রক : স্বর্ণ প্রেস, ময়মনসিংহ। ১৯৫৪, ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : এক আনা।
  • শ্বশুর জামাইর আজব কাণ্ড ও সতী সোনাই বিবির কবিতা। প্রকাশক : গিয়াসউদ্দিন। ১৪ পৌষ ১৩৬১/১৯৫৪, ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : দুই আনা।
  • শিউলী বাদলের প্রেমের খেলা, মিসট্রেজের হত্যালীলা (কবিতা ও গান)। প্রণেতা ও প্রকাশক : নোয়াদিয়া। মুদ্রক : দি নিউ প্রেস, ষ্টেশন গেইট, ময়মনসিহ। চৈত্র ১৩৬২/১৯৫৫, ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : এক আনা।
  • লায়লা বিবির সুবিচার ও জল দারগার পুরস্কার (কবিতা ও গান)। মুদ্রক : দি নিউ প্রেস, ময়মনসিংহ। ১৩৬২/১৯৫৫। ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : দুই আনা। (কবি এই আখ্যাপত্রে অভিযোগ করেছেন, “নুরুল ইসলাম, সাং কাটাখালি, পো. : দেওখোলা, ময়মনসিংহ। সে আমার কবিতা নকল করিয়াছে। তাহার প্রতিকার চাই।”)
  • আলমচান্দের দুঃখের কথা পড়, যাবে মনের ব্যথা। কবিতা ও গান। ১৩৬২/১৯৫৫। ৮ পৃষ্ঠা।
  • লালবানুর প্রেমকাহিনী ও একটি পুরুষ মেয়ে হল তাহার কবিতা ও গান। ১৯৫৫। ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : দুই আনা।
  • সতী নারী আনুয়ারা বেগমের প্রেমকাহিনী ও ছয় ডাকাতের দ্বীপান্তরের কবিতা। ১৩৬৪/১৯৫৭। ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : দুই আনা।
  • সতী নারী রূপবানের কাহিনী ও শ্বশুরের হাতে জামাইর খুন— তিন ভাইয়ের ঝগড়ার কবিতা। প্রকাশক : সুন্দর আলী খন্দকার, গ্রাম বাসুলিকান্দা, হাতিরদিয়া, ঢাকা। ১৯৭০, ৮ পৃষ্ঠা, মূল্য : দুই আনা।

মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান লোকসাহিত্যিক ও প্রত্নগবেষক

সম্পর্কিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here